বিছনাকান্দির গো-চর ভূমি গিলে খাচ্ছে পাথরখেকো চক্র!
Published: 2018-01-23 02:57:10

NewsMirror24.com
কালো টাকায় চোখে টিনের চশমা পড়ছেন স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ
বিশেষ প্রতিনিধি : সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে বিছনাকান্দি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক আসে সেখানে। বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রের মূল স্পটের পাশেই ৮৭ একর জায়গা জুড়ে গো-চারণ ভূমি। পায়ে হাটে স্পটে আসার রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত গো-চারণ ভূমি। এছাড়াও জায়গাটি আসেপাশের কয়েকটি গ্রামের গবাদি পশু চড়ানোসহ স্থানীয় শিশু-কিশোরদের খেলাধূলা ও বিনোদনের একমাত্র স্থান। কিন্তু সম্ভাবনাময় এই গো-চরণ ভূমির নিচে পাথর থাকায় পাথর খোকো চক্ররা ধ্বংস করছে। প্রতিদিন তাদের হাতে বিলিন হচ্ছে কয়েকশত কোটি টাকার পাথর। সেই পাথর তোলতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে কয়েকশত পাথর শ্রমিক। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা শ্রমিকরা যে কোন সময় বড় দূর্ঘটনার সম্মখিন হতে পারেন। সরেজমিনে সেখনে দেখা যায়, যন্ত্রদানব ফেলুডার ও এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে গো-চারণ ভূমির পাড় কাটে করা হচ্ছে বড় বড় গর্ত। আর সেই গর্ত থেকে পাথর উত্তলনের জন্য কাজ করছেন প্রায় ২ হাজার শ্রমিক। ৫০০ টাকার বিনিময়ে প্রাণের ঝকি নিয়ে কাজ করেন এক এক শ্রমিক। ১০ জন শ্রমিক প্রতিদিন প্রায় ৫টি ট্রাক্টর পাথর উত্তোলন করতে পারেন। আর একটি ট্রাক্টর পাথরের দাম প্রায় ২০ হাজার টাকা। শ্রমিদের ঝুকির ভিতরে ঠেলে দিয়ে আঙ্গুলফুলে কলা গাছ হচ্ছে পাথর খেকোরা। প্রতিদিনই গো-চরণ ভূমি হারাচ্ছে তার জায়গা। পাথর খেকোরা সেখানে এতই প্রভাবশালী তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা কিছু বলার সাহস পায়না।
স্থানীয়রা জানায়, পাথর খেকোদের কাল টাকায় চোখে টিনের চশমা পড়ছেন স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ। বারবার তাদের জানিয়ে গো-চারণ ভূমি রক্ষায় কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা। স্থানীয় আরেকটি সূত্রদাবি করেন, প্রতিদিন এক একটি ফেলুডার ওএস্কেবেটর মেশিন থেকে পুলিশ ও প্রশাসনকে দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। সেখনে অবৈধ পাথর উত্তলনে কাজ করছে প্রায় ২০টি ফেলুডার ও এস্কেবেটর মেশিন। তারা আরো দাবি করেন । গো-চারণ ভূমি ও আসপাশে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫টি গর্ত রয়েছে প্রতিটি গর্ত থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৯ হাজার টাকা প্রাশাসন ও পুলিশকে ম্যানেজ করতে আদায় করা হয়। স্থানীয় আরেকটি সূত্র জানায়, গো-চারণ ভূমি বিলিনে করছে গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, জেলা বিএনপির সদস্য জসিম উদ্দিন, জেলা ছাত্রদল সদস্য দেলোয়ার হোসেন, আওয়ামীলীগ নেতা বোরহান মিয়া, আওয়ামীলীগ নেতা হেলাল, বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ, ময়না মিয়া, সিরাজ, পাপলু, রুস্তমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহবুদ্দিন শিহাব ও বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্য।
আওয়ামীলীগ নেতা বোরহান মিয়া বলেন, তিনি গরুর ব্যবসা করেন। পাথর ব্যাবসায়ের সাথে জরীত নয়। পরে কথার ফাকে পাথর ব্যাসায় করেন বলে জানান।
রুস্তমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন শিহাব জানান, তিনি গো-চারণ ভূমি বিলিনের সাথে জড়িত নয়। গো-চারণ ভূমি রক্ষায় তিনি ওসি এবং ইউএনওকে বার বার জানিয়ে তারা নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার বিভাগীয় সমন্বয়ক এডভোকেট শাহ শাহেদা জানান, গো-চারণ ভূমি কোন ভাবেই পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহার হতে পারেনা। আর যন্ত্র দিয়ে পাথর তোলা অবৈধ।
গোয়াইরঘাট থানার ওসি (তদন্ত) হিল্লোল রায় জানান, মামলার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেনা । গো-চারণ ভূমি দেখার দায়িত্ব ইউএনও ও এসি ল্যান্ডে স্যারের।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন বিশ্বজিত কুমার পাল, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো পরিদর্শন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা করবে।